পৃষ্ঠাসমূহ

Tuesday, October 9, 2012

যাপিত জীবন .....

যাপিত জীবন .....

ভোর সাতটার মধ্যে বাচ্চা দুটিকে নিয়ে
বের হয়ে না পড়তে পারলে আর রক্ষা নেই।
১০ মিনিট এদিক-ওদিক হলেই
পড়ে যাবেন বিশাল যানজটে, আর
যানজট ঠেলে দুজনকে দুটো
আলাদা স্কুলে যথাসময়ে নামিয়ে
সাড়ে আটটার মধ্যে নিজে
অফিসে পৌঁছানো অসম্ভব।

আর অফিসে দেরি করা মানে
বসের থমথমে মুখ।
বাড়িওয়ালা সামনের মাস থেকে
ভাড়া বাড়াবেন বলেছেন,
জিনিসপত্রের দর প্রতি মাসে
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
তার চেয়ে বড় কথা,
ঢাকার অনতিদূরে একটা ফ্ল্যাট
বুকিং দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি,
মাসে মাসে তার কিস্তি জমা
দেওয়ার সময় হলে
রীতিমতো হূৎকম্প উপস্থিত হয়।
পদোন্নতিটা এবার না হলে সর্বনাশ।
বাসার কাজের মেয়েটি ঈদের সময়
দেশের বাড়ি গিয়ে আর ফেরেনি,
গিন্নির মাথা খারাপ অবস্থা।
সব কাজ সেরে দুপুরে বাচ্চা দুটোকে
স্ত্রীই নিয়ে যান বাসায়,
এই গরমে ঘেমে অস্থির হয়ে
বাড়ি ফিরে প্রতিদিনই মেজাজ করেন—
একটা গাড়ি না কিনলেই নয়।
আর গাড়ি থাকলেও নানা ফেঁকড়া,
আজ ডেন্টিং লাগবে তো কাল
চালক বিনা নোটিসে চলে যায়।
অফিসে থাকতেই মেসেজ আসে—
ঘরে বাজার লাগবে।
বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরে
আরেক খারাপ খবর,
বড় ভাইকে বুকে ব্যথা নিয়ে
হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
জামাকাপড় না পাল্টেই রওনা দিচ্ছেন,
মিরপুর যেতে লেগে গেল পাক্কা দুই ঘণ্টা।
ভাই হাসপাতালে ভর্তি,
কাল এনজিওগ্রাম হবে,
রিং পরানোর দরকার হতে পারে।
চিকিৎসক লাখ দুয়েক টাকা রাখতে বলেছেন,
ভাবি সমানে কেঁদে চলেছেন।
অনেক ঝামেলা সামলে
ক্লান্ত ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায়
বাড়ি ফিরলেন যখন তখন বিদ্যুৎ নেই,
তাই পানিও ওঠানো যায়নি।
দিন শেষে গোসলটাও করা গেল না।
রাত ১১টায় ঘামতে ঘামতে
খেতে বসে যেন মনে হলো
বুকের বাঁ দিকটা আপনারও সামান্য ব্যথা করছে।
মাথাটা দপদপ করছে যেন এখনই ছিঁড়ে যাবে।
একটা গভীর ঘুম না দিলেই নয়।
আপনি হয়তো ড্রয়ার ঘেঁটে
এবার বের করছেন একটা ঘুমের ওষুধ
আর একটা ব্যথা কমানোর ওষুধ।
আগামীকাল এই রকম আরেকটা
দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে তো...

No comments: